Wednesday 12 August 2009

পঞ্চগড় সফরে আমার কথা : পূর্ণ সূর্যগ্রহণ পূর্ণভাবে উপভোগ


আমাদের স্কুল নালন্দা থেকে আমাদের নিয়ে যাবে পঞ্চগড়। উদ্দেশ্যটা হলো
সূর্যগ্রহণ দেখা। একুশ শতকের সর্বশেষ পূর্ণ সূর্যগ্রহণ। ১০৫ বছরের মধ্যে
বাংলাদেশ থেকে কোনো পূর্ণ সূর্যগ্রহণ দৃশ্যমান হবে না। ব্যাপারটা আসলেই
অনেক বিস্ময়কর। কিন্তু যাওয়ার আগে আমার মনে কেমন জানি একটা ভয় হচ্ছিল।
কারণ এই পথ দিয়ে এর আগে কখনোই যাওয়া হয় নি। কী জানি কী হয়! বাবা-মাকে
ছেড়ে যেতেও ইচ্ছে করছিল না। কিন্তু কী করব? এতবড়ো একটা সুযোগ কি ছেড়ে
দিতে পারি?

দিনটি ছিল ২০ জুলাই। সকাল ১১টা ৩০ মিনিট। সবাই বিদ্যালয়ে এসে দেখি, সামনে
দুটি বড়ো বড়ো বাস। বাসের গায়ে নাম লেখা 'সৌদিয়া এক্সপ্রেস'। তখন আরো বেশি
খারাপ লাগছিল বাবা-মায়ের জন্য।

বাস ছাড়ল দুপুর ১২টায়। বাসে বসে একটু ঘুমানোর চেষ্টা করছিলাম। ঘুমও আসল
না। তারপর বাসের মধ্যেই অনেক আনন্দ-ফুর্তি করলাম সবাই। এভাবেই মনটা আস্তে
আস্তে ভালোর দিকে যাচ্ছিল। তারপর না-দেখা অনেক কিছুই দেখলাম যাওয়ার পথে।
যেমন বঙ্গবন্ধু সেতু, বেহুলা-লখিন্দরের মন্দির।

যেতে যেতে লেগে গেল সাড়ে ১১ ঘণ্টা, অর্থাৎ ১১টা ৩০ মিনিটে আমরা পৌঁছলাম
পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার একটি এনজিও-র রেস্টহাউজে। জায়গাটা খুব ভালোই
লাগল।

আমরা ছেলেরা সবাই রাতের খাবার খেয়ে ছেলেরদের ঘরটাতে গিয়ে নিচে চাদর
বিছিয়ে শুয়ে পড়লাম। সারারাত বিদ্যুৎ ছিল না, খুব অস্বস্তিকর একটা
ব্যাপার। পরে ভেবে দেখলাম, এই গ্রামে অনেকের বাড়িতেই বৈদ্যুতিক পাখা নেই, তাঁদের যখন
এত কষ্ট, তাহলে আমার এতটুকু কষ্ট হলে সমস্যা কোথায়? তবুও সে রাতটা ঘুমানো
গেল না।

পরের দিনটি ছিল ২১ জুলাই। সেই দিনটা ভ্রমণ করে কেটে গেল। সেদিন আমাদের
নিয়ে যাওয়া হলো দিনাজপুরের কান্তজীর মন্দির বা কান্তনগর মন্দির-এ।
মন্দিরের দিকে তাকিয়ে দেখি অপূর্ব নকশা। নকশাগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকলে
বোঝা যায় মহাভারতের ইতিহাস, রামায়ণের ইতিহাস এবং চমৎকার টেরাকোটা।জায়গাটা
দেখে খুবই ভালো লাগল।

তারপর ফিরে গেলাম আবার সেই রেস্টহাউজে। সেদিন সবাই ছিল অনেক খুশি। কেউ
কেউ আড্ডা মারছে, কেউ কেউ খেলছে বোতল দিয়ে ক্রিকেট, কেউ খেলছে দাবা,
কিন্তু আমরা কয়েকজন তাস খেলছিলাম । তাস খেলাটা আসলে খুব মজার একটা খেলা।

রাত হয়ে এলে শিক্ষকরা ডেকে সবাইকে বলে দিলেন, কাল ঘুম থেকে উঠতে হবে
মাঝরাতে। সবাই ঘুমিয়ে পড়ো। আমরা খেয়ে শুয়ে পড়লাম।

ঘুম হলো মাত্র এক ঘণ্টা। ঘুম থেকে উঠে রওয়ানা দিলাম সূর্যগ্রহণ দেখতে।
সূর্যগ্রহণ দেখার নির্দিষ্ট স্থানে যাবার জন্য আমাদের নামতে হলো পঞ্চগড়
সদরের হরিভাসা ইউনিয়নে। প্রায় ৩ কিলোমিটার পথ হাঁটতে হলো। আমি ভাবলাম,
এর চেয়ে বেশি পথ কত হেঁটেছি। অবশ্যি মানুষের ভিড়ে ঘেমে গিয়েছিলাম বেশি।

এরপর একটি মরা ক্ষেতে এসে দাঁড়ালাম সবাই। সূর্যগ্রহণ শুরু হয়ে গেছে।
পূর্ণগ্রাস হতে না হতেই বিজ্ঞানী ও বক্তা আসিফ আমাদের প্রতি দুজনকে একটি
করে ফিল্টার দিলেন দেখার জন্য। যে সময় গ্রহণটা হীরকের আংটির আকৃতি নিল,
তখন ফিল্টারটা আমার কাছে ছিল না। তাই সেই মারাত্মক উজ্জ্বল দৃশ্যটি আমার
চোখে পড়ে, সাথে সাথে আমি ফিরে তাকাই। মনে হচ্ছিল, আর বোধহয় চোখে দেখতে
পাবো না। মাথাটা খুব ব্যথা করছিল।

এই সফর থেকে আমি অনেক অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি এবং অনেক জ্ঞান অর্জন
করেছি। আমার ফিরে আসার পর মনে হয়েছিল, 'এরকম সময় আর বোধহয় ফিরে পাবো না'।

উল্লেখ্য, এ বিষয়ে আমার ইংরেজিতে একটা ফেইসবুক নোট